Panic Attack - প্যানিক এ্যাটাক
রায়হান খুবই মেধাবী ছাত্র। সে ছোটবেলা থেকে বরাবরই পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করে আসছে। ক্লাস এ সর্বদা তার মেধাস্থান ১ম -২য় এর মাঝে ছিল। রায়হান এর কোন শারীরিক অসুস্থতা নেই। তবে এইচ এস সি পরীক্ষার ১ম দিন তার হলে পৌঁছাতে দেরি হয়ে যায়। সে কোনমতে নিজের আসনে বসার পর দেখলো হঠাৎ করেই তার হাতের তালু এবং কপাল অস্বাভাবিক ভাবে ঘামতে লাগলো। শুধু তাই নয়, সে আরও লক্ষ্য করলো যে তার হৃদস্পন্দন বেড়ে যাচ্ছে এবং সে স্বাভাবিক ভাবে শ্বাস নিতে পারছে না। শ্বাস গ্রহণে তার অসুবিধা হচ্ছে।
রায়হানের সাথে হঠাৎ এমনটা কেন হলো ?
এর কারণ, রায়হান এইচ এস সি পরীক্ষার সময় অতিমাত্রায় ঘাবড়ে ছিলো। এবং তার ভয়, দুশ্চিন্তা ইত্যাদি অনুভূতি মিলে সে যে মিশ্র অনুভুতির মধ্য দিয়ে গেছে এটি ‘প্যানিক এট্যাক’ হিসেবে পরিচিত।
আসুন আমরা প্যানিক এ্যাটাক সম্পর্কে একটু জেনে নেই।
প্যানিক এ্যাটাক কী?
প্যানিক এ্যাটাক হচ্ছে এমন একটি অনুভূতি যেটি খুবই আকস্মিক এবং তীব্র উদ্বেগ এর কারনে হয়ে থাকে। এর ফলে মানুষ যে কোন পরিস্থিতি বা টপিক এর প্রতি মারাত্মকভাবে ভিত হয়ে পড়ে। এর ফলে বাংলাতে একে বলা হয় “অত্যাতঙ্ক আক্রমণ”৷
এটি হলো এক ধরনের মানসিক অবস্থা যেটির কারণে মানুষ হুট করেই খুবই ভয় পায় এবং উত্তেজিত হয়ে যায়। তার আচার আচরণ দেখলে মনে হতে পারে যে সে পাগল হয়ে যাচ্ছে বা যেকোনো সময় জ্ঞান হারাতে পারে। দীর্ঘদিন যাবত যদি এর চিকিৎসা না হয় তবে তার প্যানিক ডিজঅর্ডার হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
প্যানিক এ্যাটাক এর কারণঃ
প্যানিক এ্যাটাক এর কোনো নির্দিষ্ট কারণ নেই। সাধারণত মেজর কোনো স্ট্রেস বা ট্রমার কারনে প্যানিক এ্যাটাক হতে পারে। হঠাৎ করে জীবনে কোন আকস্মিক দুর্ঘটনা ঘটে গেলেও প্যানিক এ্যাটাক হতে পারে।
যেমন স্বামী স্ত্রীর বিচ্ছেদ, খুব প্রিয় বা কাছের কোনো ব্যাক্তির আকস্মিক মৃত্যু, দীর্ঘদিন প্রচুর মানসিক চাপ ইত্যাদি কারনসহ আরও বিভিন্ন কারনে প্যানিক এ্যাটাক হতে পারে।
আবার অনেক সময় জেনেটিক কারনে, অতিরিক্ত পরিমানে মানুষ পেয়ে থাকে।
প্যানিক এ্যাটাক এর লক্ষনসমূহঃ
প্যানিক অ্যাটাক হলে সাধারণত নিম্নোক্ত লক্ষণ বা উপসর্গগুলি দেখা যায়।
- সামনে কোন বড় বিপদ আছে এমন অনুভূতি।
- নিয়ন্ত্রণ হারানোর বা মৃত্যুর ভয়।
- প্রচন্ড দ্রুত হৃদস্পন্দন।
- মাত্রাতিরিক্ত ঘাম হওয়া।
- শরীর বা হাত-পা অস্বাভাবিকভাবে কাঁপা।
- হঠাৎ শ্বাসকষ্ট হওয়া।
- গলায় শক্ত অনুভব করা।
- ৮। হুট করে ঠাণ্ডা লাগা।
- বমি বমি ভাব
- পেট ফাঁপা
- বুকে ব্যাথা, মাথাব্যথা
- মাথা ঘোরা, মাথা ঘোরা বা অজ্ঞানতা
- অসাড়তা বা সুড়সুড় সংবেদন
- অবাস্তবতা বা বিচ্ছিন্নতার অনুভূতি
প্রত্যেকে তাদের জীবনে ২-৩ বার প্যানিক এ্যাটাক এর সম্মুখিন হয়ে থাকে। তবে কেউ যদি ঘনঘন দীর্ঘদিন ধরে এরকম পরিস্থিতির শিকার হয় তবে এটা শীঘ্রই প্যানিক ডিজর্ডার এ রুপ নিতে পারে।
কিভাবে প্যানিক এট্যাকের সাথে মোকাবেলা করা যায়?
প্যানিক এট্যাক মানবজীবনের জন্য কোনো মৃত্যুঝুকি না আনলেও এটি এবং পুনরায় প্যানিক এ্যাটাক হওয়ার তীব্র আতঙ্ক জীবনকে করে তুলতে পারে দূর্বিষহ।
প্যানিক এ্যাটাক হলে সর্বপ্রথম যে কাজটি করা যায় সেটি হলো নিজেকে বুঝানো যে এটি শুধুমাত্র আপনার দুশ্চিন্তার কারণে হচ্ছে এবং এটি কিছুক্ষণ পরে থেমে যাবে।
প্রফেসর পল সালকভ্স্কিস, যিনি হলেন বাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিকাল সাইকোলজি এবং ফলিত বিজ্ঞান এর প্রফেসর। তিনি উপদেশ দেন যে, প্যানিক এট্যাক হলে নিজের মনযোগ কে অন্যদিকে না নেয়ার চেষ্টা করে বরং পরিস্থিতিটিকে মোকাবেলা করার চেষ্টা করতে।
কেননা যখন আপনি দেখবেন যে কিছুক্ষণ পরে সবকিছু স্বাভাবিক অবস্থাতে ফিরে এসেছে এবং আপনি ঠিক আছেন তখন আপনি এই পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে তুলনামূলক কম আতঙ্কিত থাকবেন।
এই পরিস্থিতিতে নিজেকে শান্ত রাখার আরেকটি উপায় হলো শ্বাস – প্রশ্বাস এর ব্যায়াম করা। ইংরেজিতে এটি “ব্রিদিং এক্সারসাইজ” হিসেবে পরিচিত।
প্রথমে আপনার নাক দিয়ে ধীরে ধীরে শ্বাসগ্রহণ করবেন। এবং এরপর পুনরায় ধীরে ধীরে আপনার মুখ দিয়ে শ্বাস ত্যাগ করবেন। প্রতিবার ৫ সেকেন্ড করে অপেক্ষা করবেন। ব্যায়ামটি করার সময় নিজের চোখ বন্ধ রাখবেন এবং শুধুমাত্র শ্বাস – প্রশ্বাসের দিকে মনযোগ রাখার চেষ্টা করবেন। এটি আপনাকে প্যানিক এট্যাকের মুহূর্তে ঠান্ডা হতে সহায়তা করবে।
প্যানিক ডিজঅর্ডার এ করনীয় কী ?
প্যানিক ডিজঅর্ডার মারাত্মক একটি কনডিশন। সময়মত চিকিৎসা না হলে, এটি স্থায়ী রূপ ধারণ করতে পারে।
এ অবস্থায় সর্বপ্রথম চিকিৎসক এর শরণাপন্ন হতে হবে। চিকিৎসক এর প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী চলতে হবে এবং সূক্ষ্মভাবে নিয়মকানুন মেনে চলতে হবে।
এছাড়াও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং শরীরচর্চার নিয়ম অনুযায়ী চলতে হবে।
Read More : How Music Helps Us to Cope
কিভাবে প্যানিক এ্যাটাক কে প্রতিরোধ করবেন?
প্যানিক এট্যাক হতে নিরাপদ থাকতে চাইলে সর্বপ্রথম আপনাকে আপনার স্ট্রেস এর কারণ বা উৎস সম্পর্কে জানতে হবে। আর কিছু দৈনন্দিন নিয়মাবলি অনুসরণ করতে হবে। যেমনঃ
১। প্রতিদিন শ্বাস – প্রশ্বাস এর ব্যায়াম করা। এটি আপনার মন কে শান্ত এবং চাপবিহীন থাকতে সাহায্য করবে।
২। নিয়মিত শরীরচর্চা করতে হবে। এটি আপনার স্ট্রেস লেভেল কে নিয়ন্ত্রণ করবে এবং দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দিবে।
৩। নিয়মিত স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। বিশেষ করে যে খাদ্যগুলো ব্লাড সুগারকে স্থিতিশীল করবে।
৪। ক্যাফেইন, অ্যালকোহল, ধূমপান পুরোপুরি বর্জন করতে হবে। এগুলো প্যানিক এ্যাটাক কে মারাত্মক পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে।
৫। সিবিটি (কগনিটিভ বিহেভিয়ারেল থেরাপি) নেতিবাচক চিন্তাসমূহকে শনাক্ত করতে এবং পরিবর্তন করতে সক্ষম যেটি পরবর্তী প্যানিক এ্যাটাক হতে রক্ষা করতে পারে।
শেষ কথা
মনে রাখতে হবে, মানসিক স্বাস্থ্য এবং শারীরিক স্বাস্থ্য উভয়ই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মানসিক স্বাস্থ্য ভালো না থাকলে সেটির প্রভাব শারীরিক স্বাস্থ্যের উপর ও পরে। তাই ঘন ঘন প্যানিক এট্যাকের কোনো লক্ষণ এর সম্মুখিন হলে এটিকে উপেক্ষা না করে অবশ্যই চিকিৎসক এর শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
ইতাশা আনান
লিডার, প্রজেক্ট হ্যাপিনেস