ইগো নিয়ন্ত্রণের দুর্দান্ত কৌশল
সিয়াম ঢাকা শহরের একটি বিখ্যাত কলেজ থেকে পড়াশুনা করছে। নামীদামী কলেজে স্বাভাবিক ভাবেই নিজেকে একটু বড় ভাবার ভাবনা চলে আসতে পারে। কিন্তু সিয়ামের ব্যাপারটি ভিন্ন। সে এটাকে রীতিমত ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বেড়ায়। যে বন্ধুরা তারই সাথে গ্রামে স্কুলে পড়াশুনা করেছে তাদেরকেও তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে নিয়মিত। অনেকের সাথেই কথা বলতে চায় না। যেচে এসে কথা বলতে অবজ্ঞা করে বা ভ্রুকুটি করে তাকায়। সিয়ামের মত এই ধরনের অনেকেই আছে যারা নিজেকে সবসময় বড় মনে করে এবং অন্যকে হেয় প্রতিপন্ন করে। আর্থিকভাবে নীচু কাউকে দেখলেও আমাদের অনেকেই তাকে কিভাবে ছোট করা সব ধরনের কৌশল অবলম্বন করি।সাইকোলজির ভাষায় এটাকে ইগো বলা হয়।
ইগো কী?
সরল ভাষায় ইগো অহংকার বা অন্যকে হিংসা করাও বুঝায়। বেস্ট সেলার লেখক ইগো ইজ দ্য এনিমি বইয়ের লেখক রায়ান হলিড এর মতে ইগো হচ্ছে
“নিজের বড়ত্বের প্রতি একটি অস্বাভাবিক বিশ্বাস। যার সাথে মিশে থাকে অতি অহঙ্কার এবং আত্মকেন্দ্রিক ও স্বার্থপর উচ্চাকাঙ্খা।”
আমরা সবাই জানি ইগো একটি খারাপ আচরণ এবং এটা আমাদের সবার মাঝেই কিছু না কিছু মাত্রায় আছে। আর সেজন্যই এটা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বও আমাদের। ইগো কিভাবে আপনার জীবনকে খারাপ বা ভালো দিকে নিয়ে যেতে পারে, তা নিয়েই আজকে কথা হবে।
আপনার মাঝে বড় হবার সম্ভাবনা আছে, এবং কাজ করলে আপনি আসলেই অনেক বড় হতে পারবেন – এটা আত্মবিশ্বাস। কিন্তু আত্মবিশ্বাসী মানুষ এটাও জানে যে তার বর্তমান অবস্থা কি। সে যতটা বড় হতে চায়, ততটা বড় হতে হলে তাকে আরও কতটা কাজ করতে হবে সেটা সে খুব ভালকরে জানে।
যার মাঝে ইগো আছে, সে সত্যিকার বড় হওয়ার আগেই নিজেকে বড় ভাবতে শুরু করে। তার এই ভাবনা তাকে সত্যিকার বড় হওয়ার পথে এগুতে বাধা দেয়। কারনটা খুব স্বাভাবিক, আপনি যদি আগেই ভেবে বসে থাকেন আপনি ইতোমধ্যেই অনেক বড় কিছু করে ফেলেছেন, তবে আর সত্যিকার বড় কিছু করার জন্য কষ্ট করার দরকার মনে করবেন না।
ইগো আমাদের সাথে এই খেলাটাই খেলে। ইগো সম্পন্ন মানুষ তার মিথ্যা অহঙ্কার নিয়ে বসে থাকে, আর অন্যরা তাকে টপকে সত্যিকারের বড় হয়ে ওঠে।
ইগোর লক্ষণঃ
১. ভুল করেও ভুল স্বীকার করতে চায় না:
একজন মানুষের মধ্যে যে প্রবল ইগো সমস্যা আছে তার একটি প্রধান লক্ষণ তারা ভুল করেও ভুল স্বীকার করতে চায় না। অনেক সময়ে ভুল বুঝতে পারলেও তারা তা স্বীকার করে না। সেই অস্বীকার যেমন অন্যদের কাছে করে, তেমনি তাদের নিজেদের কাছেও করে। আর ভুল স্বীকার না করলে সেই ভুল শোধরানোও অসম্ভব। একজন ইগো সম্পন্ন মানুষের যদি আচরণগত সমস্যা থাকে, এবং আপনি যদি তাকে সেটা ধরিয়ে দিতে যান, তাহলে সে আপনারই ওপর রাগ করবে। পরীক্ষায় নম্বর কম পেলে সেটা হবে শিক্ষকের দোষ, কিন্তু নিজে নিজের জ্ঞান বাড়ানোর কোনও চেষ্টা সে করবে না।
২. নিজেকে একটু বেশি জ্ঞানী মনে করে:
ইগো সম্পন্ন মানুষদের আরও একটি ব্যাপার, তারা নিজেরা যতটুকু জানে, তার তুলনায় বেশি জ্ঞানী বলে নিজেদের জাহির করতে চায়। আপনি যদি মনে করেন তারা শুধু অন্যদেরকে বিশ্বাস করাতে চায় যে তারা বেশি জানে, তাহলে ভুল করবেন। এরা আসলে নিজেরাও বিশ্বাস করে যে তারা যে কোনও বিষয়ে সবচেয়ে বেশি জ্ঞানী।
৩. তর্কে হার মানবে না:
একজন ইগো সম্পন্ন মানুষকে আপনি কখনও যুক্তি দিয়ে বোঝাতে পারবেন না। মানে, তারা কখনও তর্কে হার মানবে না। তারা যদি বোঝেও যে তাদের তুলনায় তাদের সামনের মানুষটির কথা বেশি যুক্তিসঙ্গত ও প্রমানিত, তারপরও তারা মানবে না।
৪. পরিস্থিতি বা অন্য মানুষের ওপরে দোষ চাপায়:
একজন ইগোর দ্বারা অসুস্থ মানুষ ব্যর্থ হলেও সেই ব্যর্থতা থেকে না শিখে সব সময়ে পরিস্থিতি বা অন্য মানুষের ওপরে দোষ চাপাতে ভালবাসে। তারা কখনও নিজের দিকে তাকিয়ে দেখে না তাদের কোথায় গলদ আছে। এর কারন তারা একটি ঘোরের মাঝে থাকে। তারা ভাবে, তাদের মধ্যে কোনও খুঁত নেই এবং সেই কারনে তারা কোনওভাবেই ভুল করতে পারে না।
৫. ঈর্ষা, পরনিন্দা, হিংসা ইগোর ফলাফল :
আগেই বলা হয়েছে, ঈর্ষা, পরনিন্দা, হিংসা ইত্যাদি ইগোর অংশ। এগুলো আসলে ইগোর ফলাফল। একজন মানুষ যখন ইগোর শিকার হয় তখন সে অযথাই নিজেকে অন্যদের চেয়ে বড় ভাবতে শুরু করে। তারচেয়ে কেউ কোনও কিছুতে ভাল হলে সে কোনও না কোনও ভাবে তার ভুল ধরার চেষ্টা করে। যে কোনও ভাবে অন্য মানুষকে ছোট করার চেষ্টা করতে থাকে। আর এর ফলে সাধারন মানুষ তো তাকে পছন্দ করেই না, কাছের মানুষগুলোও দূরে চলে যায়। ইগো আসলে একটি মানসিক প্যারালাইসিস, যা আপনাকে শোয়া অবস্থায় বিশ্বাস করায় আপনি এখন উড়ছেন।
ইগো কেন সমস্যা?
ইগো হচ্ছে মিথের মত। সামান্য কোনো সফলতা পেলেই সেটাকে নিজেকে অন্য উচ্চতায় অনুভব করতে শুরু করে। অল্প কিছু থাকলেই সেটা নিয়ে দর্প ও গর্ব করে। একজন ইগো সম্পন্ন মানুষ মনে করে সেই সবসময় সঠিক এবং বাকীরা ভুল। একজন ইগো সম্পন্ন মানুষকে শুধরানো কঠিন কারন সে নিজের ভুল দেখতে পায় না এবং অন্যরা তার ভুল ধরবে সেটা মেনে নিতে পারে না। তাকে যুক্তি দিয়ে কখনো বুঝানো কঠিন। ইগো হচ্ছে মানসিক অসুস্থতা যা আপনাকে বিশ্বাস করাবে আপনি প্লেনে উড়ছেন যদিও পুরনো কোনো ভাঙ্গা বাই সাইকেল চালাচ্ছেন।
ইগো কিভাবে নিয়ন্ত্রন করব
বিনীত থাকা:
যে কোনও কাজ শুরু করার আগে ভেবে নিন আপনি নিজেকে যতটা ভাবছেন ততটা গুরুত্বপূর্ণ আপনি নন। আগে সফল হোন, তারপর নিজের গুরুত্ব নিয়ে চিন্তা করুন। লেখকের মতে, এই ভাবনা আপনাকে কাজের সময়ে বিনীত ও শান্ত থাকতে সাহায্য করবে। অনেক সময়েই দেখবেন গ্রেট গ্রেট খেলোয়াড় বিশ্বকাপ বা এই ধরনের কিছু জিতলে বলেন, যে তাদের আরও উন্নতি করার জায়গা আছে। সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড গড়া হলে অনেক সেরা খেলোয়াড় বলেন যে তারা রেকর্ডটিকে সামনে আরও উপরে নিয়ে যেতে চান। “নিজেকে ছাড়িয়ে যেতে” চান। এর কারন তারা সব সময়ে সতর্ক থাকেন, তাদের অর্জন যেন তাদের ইগোর শিকার না বানায়। একটি বড় লক্ষ্য পূরণ হলে তাঁরা আরও বড় লক্ষ্যের দিকে চোখ দেন।
জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা মাথায় রাখা:
কোনও কাজ শুরুর আগে সব সময়ে মাথায় রাখুন আপনি আসলে সেই কাজের বিষয়ে কতটা জানেন। একটি বিষয় মনে গেঁথে নিন, কোনও বিষয়েই জানার কোনও শেষ নেই, এবং আপনি এই কাজটির বিষয়েও সবকিছু জানেন না। কাজেই আপনার এই কাজ থেকেও নতুন অনেক কিছু শেখার আছে। আমাদের শুধু একার সাফল্য নিয়েই ভাবলে চলবে না। ক্যানভাসটিকে আরও বড় করতে হলে, আমাদের অন্যদের নিয়েও ভাবতে হবে। একজন মানুষের সাফল্য বেশিরভাগ সময়েই অন্য আরও কিছু মানুষের সাফল্যের হাত ধরে আসে।ইগোকে পাশ কাটিয়ে সাফল্য পেতে গেলে আপনাকে এমন ভাবে কাজ করতে হবে যাতে করে অন্যদের জন্যও তাদের কাজ করাটা সহজ হয়ে যায়। নতুন কোথাও কাজ করতে গেলে প্রথমেই নিজের জ্ঞান ও মতামত জাহির করতে যাবেন না। আপনি ধরেই নিন যে যাদের সাথে আপনি কাজ করছেন, তারা আপনার চেয়ে বেশি জ্ঞান রাখেন। এতে করে আপনি নতুন অনেক কিছু শিখতে পারবেন। অন্যদের জ্ঞানটি নিজে অর্জন করার পর সেই অনুযায়ী কাজ করতে করতে যখন তারা আপনার ওপর আস্থা পাবেন, তখনই তারা আপনার মতামতকে গুরুত্ব দেবেন। কাজেই প্রথমে অন্যদের কাছ থেকে শেখার মানসিকতা নিয়ে কাজ শুরু করুন। এর ফলে ইগো আপনাকে পরাজিত করতে পারবে না।
কাজ ও বিশ্বাস পদ্ধতি
এই পদ্ধতিতে ইগোকে জয় করতে গেলে প্রথমেই যা করতে হবে, তা হল কথা কম বলে কাজ শুরু করে দেয়া। ইগো সম্পন্ন মানুষরা নিজের বড়ত্বের ব্যাপারে কথা বলতে বেশি ভালবাসে। ভবিষ্যতে তারা কি করবে, না করবে, কত বড় বড় কাজ করবে – এইসব কথা বলে বেড়ায়, কিন্তু তেমন কোনও কাজ আসলে করে না। লেখকের মতে, এই বড় বড় কথা বলার অভ্যাস আসলে মানুষের ভেতর থেকে কাজ করার গতি নষ্ট করে ফেলে। নিজের পরিকল্পনার ব্যাপারে বড় বড় কথা বলতে বলতে নিজের মাঝে একটি অহেতুক আত্মতুষ্টি জন্ম নেয়। তাই কাজ করে সেই পর্যায়ে যাওয়ার আগ্রহ ততটা থাকে না। লেখকের মতে, এই বড় বড় কথা বলার বদলে মানুষ যদি সত্যিকার কাজে নামে, তাহলে কথা বলার শক্তিটি কাজ করার শক্তিতে পরিনত হয়।
কথা না বলে কাজ করার পাশাপাশি লেখক এই অধ্যায়ে অন্য যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন – তা হল বিশ্বাস। একটি সফল কাজ করতে গেলে নিজের প্রতি বিশ্বাস তো অবশ্যই থাকতে হবে। কিন্তু যদি একজন মানুষ সব রকমের ইগোকে জয় করে সাফল্য পেতে চায় সেক্ষেত্রে তাকে অন্যদের ওপরও বিশ্বাস রাখতে হবে।
ইগো অনেক সময়ে মানুষকে অন্য মানুষের যোগ্যতার ওপর ভরসা করতে বাধা দেয়। অনেক সময়েই ইগোর কারনে মানুষ ভাবে যে, কিছু কাজ পৃথিবীতে তার থেকে ভাল আর কেউ করতে পারে না। এই ভাবনার কারনে কিছু মানুষ সব কাজ একাই করতে চায় এবং এর ফলে কাজের ক্ষেত্রে অন্যদের সাথে তার কোনও ভাল সম্পর্ক গড়ে ওঠে না। এছাড়াও অন্যদের সাথে নিয়ে না করার জন্য কাজটি আসলে যত ভাল হতে পারত – ততটা ভাল হয় না।
নিজের প্রতি অতিরিক্ত বিশ্বাসের কারনে মানুষ অন্যের ওপর বিশ্বাস রাখতে পারে না। এমনকি অন্যদের দক্ষতা সম্পর্কে জানার পরও ইগো সম্পন্ন মানুষ তাদের ওপর ভরসা করতে পারে না – কারন তারা ভাবে সেই কাজ তারা নিজেরা করলেই সবথেকে ভাল হবে।
একথা ঠিক যে ঢালাও ভাবে সবার ওপর বিশ্বাস করতে নেই। কিন্তু একটা মানুষকে ভাল করে লক্ষ্য করলে এবং তার কাজ দেখলে তার সততা ও দক্ষতা সম্পর্কে বেশ ভাল ধারনা পাওয়া যায়। আপনি একজন অসুস্থ ইগো সম্পন্ন মানুষের সাথে দীর্ঘদিন একসাথে কাজ করার পরও সে আপনার ওপর কোনও দায়িত্ব দেয়ার ভরসা পাবে না। কিন্তু এই কারনে অনেক বড় বড় সম্ভাবনাময় প্রজেক্ট যতটা সাফল্য পাওয়ার উচিৎ – ততটা পায় না।
বিশ্বাস একটি কাজের গতিকে অনেক গুণে বাড়িয়ে দেয়। একটি ব্যবসায়ের সাফল্যের গতি সবথেকে বেশি থাকে যখন মালিক, কর্মচারী, অংশীদাররা একে অপরের ওপর ভরসা করে। একটি প্রজেক্টের কাজ যখন বেশ কয়েকজনের মাঝে ভাগ হয়ে যায় তাহলে একটি কাজের সময়েই বেশ কয়েকটি কাজ একসাথে হয়ে যায়। একটি প্রজেক্টে যদি চারটি ধাপের কাজ থাকে, এবং অফিসে লোকও হয় চারজন। তাদের প্রত্যেকেরই কাজের বিষয়ে ভাল জ্ঞান ও দক্ষতা আছে। কিন্তু এদের মধ্যে একজন আছে যার ইগোর সমস্যা। সে অন্যদের কাজ করতে না দিয়ে নিজেই পুরো প্রজেক্টটি নামাবে বলে ঠিক করল। এতে করে প্রজেক্ট এর চারটি ধাপ করতে তাকে এক এক করে চার ঘন্টা কাজ করতে হল।
কিন্তু এই কাজটি যদি চারজনে মিলে করত, তাহলে দেখা যেত যে এক ঘন্টায়ই কাজটি শেষ করা যায়। কিন্তু তার বদলে কাজটি করতে তিন ঘন্টা বেশি সময় নষ্ট হল, কারন একজন মানুষ তার ইগোর কারনে অন্যদের হাতে কাজের কোনও অংশই ছাড়তে চাইছিল না।
লেখকের মতে আপনি যদি ইগোকে জয় করে অন্যদের ওপর বিশ্বাস রাখেন, তাহলে কাজের গতি তো বাড়বেই, সেই সাথে অন্যরাও আপনাকে বিশ্বাস ও সম্মান করবে।
সাফল্য ও ব্যর্থতা
যে কোনও কাজে অপ্রত্যাশিত ফলাফল আসলে একটি রাস্তার বাঁকের মত। এই বাঁকে আপনি নিজেকে আরও একটু ভাল করে নেয়ার সুযোগ পাবেন।
এই অপ্রত্যাশিত ফলাফল ভাল খারাপ – দু’টোই হতে পারে। আর এই সময়ে ইগো তার বড় চালটা চালে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে ইগোর কারনে আপনি সঠিক পথ থেকে সরে যেতে পারেন। ইগো খারাপ ও ভাল – দুই সময়েই আপনাকে শেষ করে দেয়ার ক্ষমতা রাখে।
আপনি যখন কোনও খারাপ বা ভুল কিছু করেন, আপনার ইগো আপনাকে সেই ভুল স্বীকার করে সেটা না শুধরে, সেই দায় অন্যের ওপর চাপাতে উৎসাহিত করে। এই পরিস্থিতিতে ইগোর শিকার হলে আপনি কখনওই সেই খারাপ অবস্থার জাল কেটে বের হতে পারবেন না।
আবার যখন আপনি ভাল কিছু করেন অথবা আশার থেকে বেশি সাফল্য পান, তখন আপনার ইগো সেই সাফল্যের জন্য অন্যদের প্রাপ্য কৃতিত্ব দিতে চায়না। ইগো আপনাকে বোঝায় যে কাজটির পুরো কৃতিত্ব আপনার একার। এই ধরনের ইগোর কারনে সাফল্য ও সম্মান ধরে রাখাটা খুব কঠিন হয়ে যায়।
আপনি যখনই আশার থেকে বেশি ভাল বা খারাপ পরিস্থিতিতে পড়বেন, আপনাকে ভাবতে হবে এটা আপনার নিজের উন্নতি করার জন্য সবচেয়ে ভাল সময়।
আপনি যদি চরম ভাবে ব্যর্থ হন, তবে আপনাকে ভেবে দেখতে হবে সেই ব্যর্থতার পেছনে আপনার নিজের কি কি ভুল ছিল, যেগুলো শুধরে আপনি সেই ব্যর্থতা কাটিয়ে উঠতে পারবেন।
আবার যদি আশার চেয়ে বেশি সাফল্য পেয়ে যান, তবে ভাবুন, যদি কাজটি সামনে আরও ভালভাবে করা যায় তবে আপনি আরও বেশি সাফল্য পাবেন। যারা আপনার কাজের সময়ে বিভিন্ন ভাবে সমর্থন দিয়েছেন, সব সময়ে তাদের কৃতজ্ঞতা জানান। তাদেরকে অভিনন্দন ও ধন্যবাদ দিন। আপনার এই সাফল্যের পেছনে কার কি অবদান আছে তা ভালকরে মনে করুন। প্রয়োজন হলে কাগজ-কলম নিয়ে বসে যান।
আপনার নিজের ভেতরে অহঙ্কার আর হতাশাকে কখনওই জায়গা দেবেন না। হতাশা একটি দুর্বলতা, যা থেকে অহঙ্কারের মত রোগ দেখা দেয়, আপনার নিজের ভুল গুলোকে মেনে নিতে বাধা দেয়। আর আপনি নিজেও জানেন অহঙ্কার মানুষের পতন ডেকে আনে। সাফল্যে আত্মহারা হয়ে গেলেও সেই একই ঘটনা ঘটে। মনে রাখবেন, একা কেউ সফল হতে পারে না। আপনি যদি খুব ভাল একটি পন্য আবিষ্কার করেন এবং তা থেকে আপনার দারুন লাভ হতে থাকে – মনে রাখবেন, মানুষ যদি আপনার পন্য না কিনত, তাহলে আপনার লাভ হত না।
প্রতিটি নতুন আইডিয়া আসলে আলাদা আলাদা জ্ঞানের মিশ্রণ। আপনি হয়তো বুঝতেও পারেন না, আপনার ‘ইউনিক’ আইডিয়াটি হয়তো দশটি বই পড়ার পরে এসে গেছে। আপনার অবচেতনে দশটি বইয়ের জ্ঞানগুলো মিলেমিশে একটি নতুন জ্ঞানের জন্ম দিয়েছে।
কাজেই সব সময়ে বিনীত থাকুন। ইগোকে কখনওই আপনার ওপর প্রভুত্ব করতে দেবেন না। আপনার যদি নিজেকে পৃথিবীর প্রভু মনে হয়, তবে মনে রাখবেন, আপনি পৃথিবীর প্রভু নন, ইগো আপনার প্রভু হয়ে বসায় আপনার মাথায় এই উদ্ভট ভাবনা এসেছে।
Read more: How to Love & Take Care of yourself